বর্তমান বিশ্ব রেকর্ডধারী ম্যারাথন দৌড়বিদ এলিউড কিপচোগি
কেনীয় দূরপাল্লার দৌড়বিদ এলিউড কিপচোগি (Eliud Kipchoge) বর্তমান বিশ্ব রেকর্ডধারী ম্যারাথন দৌড়বিদ। তিনি ২০১৮ সালের বার্লিন ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় ২ ঘণ্টা ১ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড সময়ে দৌড় সমাপ্ত করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন। যা ছিল পূর্ববর্তী রেকর্ড বা সেরা সময়ের চেয়ে ১ মিনিট ১৮ সেকেন্ড সময় কম।
তবে এই বিশ্ব রেকর্ডের চেয়েও কম সময়ে তিনি ম্যারাথন সম্পন্ন করেছেন। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি দুই ঘণ্টারও কম সময়ে ম্যারাথন শেষ করেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক সংস্থা স্বীকৃত উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা না হওয়ায় সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব রেকর্ডের মর্যাদা লাভ করেনি। ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর কিপচোগি ভিয়েনা শহরে আয়োজিত একটি বিশেষ সহায়তাবিশিষ্ট ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নেন এবং ম্যারাথন শেষ করতে ১ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট ৪০.২ সেকেন্ড সময় নেন। বিশ্ব রেকর্ড হিসেবে তালিকাভুক্ত না হলেও এতো কম সময়ে বিশ্বে আর কোন রানার ম্যারাথন সম্পন্ন করতে পারেনি। তিনি ভিয়েনা শহরকেন্দ্রের প্রাটার নগর উদ্যানকে বেষ্টনকারী ৯.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি আবদ্ধ পথ চারবার প্রদক্ষিণ করে এই ম্যারাথন দৌড়টি সম্পন্ন করেন। ৪১জন সহায়ক দৌড়বিদ তাকে গতি ধরে রাখতে সহায়তা করে। এই ম্যারাথনে কিপচোগি প্রতি কিলোমিটার পথ শেষ করতে গড়ে ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ড সময় নেন।
কিপচোগি ২০১৬ সালে অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ম্যারাথন দৌড়ে বিজয়ী হন। তিনি রেকর্ড সংখ্যক চারবার লন্ডন ম্যারাথন জিতেছেন। সব মিলিয়ে তিনি ১৩টি ম্যারাথনে অংশ নিয়ে ১২টিতে জয়লাভ করেছেন। এক পর্যায়ে তিনি পরপর ৮টি ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করেন, যা অবিসংবাদিত। কিপচোগি-কে “আধুনিক যুগের সর্বসেরা ম্যারাথন দৌড়বিদ” আখ্যা দেওয়া হয়েছে। মার্কিন দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকাতে তাকে “সর্বকালের সেরা ম্যারাথন দৌড়বিদ” বলা হয়েছে। কিপচোগি তার একাগ্রচিত্ত ও অদম্য মনোভাবের জন্য বিখ্যাত। ২০১৫ সালের বার্লিন ম্যারাথন জেতার পথে তার জুতার অংশবিশেষ খুলে বেরিয়ে আসার পরেও তিনি ফোসকা পড়া রক্তাক্ত পা নিয়ে দৌড় শেষ করে ছাড়েন।
অফিশিয়াল রেকর্ড না গড়তে পারলেও দুই ঘণ্টার আগে ম্যারাথন শেষ করে উচ্ছ্বসিত কিপচোগি জানান,
‘আজকের রেসই প্রমাণ করে মানুষের অসাধ্য কিছু নেই। আমি যেহেতু একবার এটা করতে পেরেছি, আশা করি আরও অনেকেই এটা পারবে। আমার সাথে বাকি ৪১ জন যারা দৌড়েছে, সবাই দারুণ অ্যাথলেট। আমরা সবাই মিলেই ইতিহাসটা গড়েছি।’
কিপচোগির জন্ম ১৯৮৪ সালের ৫ নভেম্বর কেনিয়ার নান্দি কাউন্টির কাপসিসিওয়াতে। কিপচোগি ১৯৯৯ সালে কাপ্তেল সেকেন্ডারি স্কুল থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন, কিন্তু তখনো তিনি খুব গুরুত্ব নিয়ে দৌড় শুরু করেননি। তিনি প্রতিদিন স্কুলে যেতে এবং ফিরতে দুই মাইল (৩.২ কিমি) করে দৌড়াতেন। কিপচোগি তার একক মায়ের সন্তান, তার বাবা ছিলেন তার কাছে কেবল ফ্রেমে বন্দী একজন মানুষ। চার সন্তানের মধ্যে কিপচোগি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।
২০০২ সালে ১৬ বছর বয়সে তার প্রশিক্ষক প্যাট্রিক সাং (স্টিপ্লেচেসে অলিম্পিক পদকপ্রাপ্ত) এর সাথে সাক্ষাতের পর থেকেই তার জীবনের গতিপথ বদলাতে শুরু করে। প্যাট্রিক সাং কিপচোগির প্রতিভা আঁচ করতে পেরে একটি প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ সমস্যা! তার কাছে লেখার মতো কোন কলম ছিল না। কিপচোগির ভাষ্যমতে, “আমি একটি লাঠি পেয়েছিলাম এবং নিজের বাহুতে ১০ দিনের জন্য পরিকল্পনাটি লিখে ফেললাম। তারপরে আমি এটিকে মাথায় চেপে ধরে একছুটে বাড়ি ফিরলামএবং প্রশিক্ষকের কথাগুলো মনে থাকতে থাকতে কাগজ-কলমে লিখে রাখলাম।” এরপর থেকেই ধারাবাহিকভাবে তিনি এগিয়ে যেতে থাকেন তার জীবনের লক্ষ্যে এবং একের পর এক বিশ্ব আসরে অংশ নিতে শুরু করেন। আর সাফল্যও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি।
তার জীবনের অনেক কিছুই একইরকম রয়ে গেছে। কিপচোগির জীবনযাপন খুবই সাধারণ এবং যতোটা সম্ভব বিড়ম্বনা থেকে মুক্ত। স্ত্রী এবং তিন সন্তান নিয়ে কেনিয়ার এলডোরেটে শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে কাপ্তাগাটের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তিনি খুঁজে নিয়েছেন জীবনের শান্তি আর অ্যাথলেটিক জীবনের সাফল্য।
কিপচোগি সবসময় মনে করেন, তার কাছে খ্যাতি নয় বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অনুপ্রেরণা। এটি কোনভাবেই বিখ্যাত হয়ে ওঠার বিষয় নয়, কিন্তু প্রতিটি মানুষের মধ্যে যে অনুপ্রেরণা রয়েছে তাকে যথাসম্ভব ছড়িয়ে দেওয়া। তার সুখস্মৃতিগুলো মানুষকে ছুয়ে যায়, আর তারা শুনিয়ে যায় “কোন মানুষই সীমাবদ্ধ নয়”।
সম্পাদনা: Run for Unity in Diversity
3rd BARISHAL MARATHON 2024
2 February 2024