দৌড়ের আবেগ কখনও থামে না জোসেলিন ব্রেয়া’র অবিস্মরণীয় পদচিহ্ন

দৌড়ের আবেগ কখনও থামে না জোসেলিন ব্রেয়া’র অবিস্মরণীয় পদচিহ্ন

জোসেলিন ব্রেয়া’র অবিস্মরণীয় পদচিহ্ন
গত ৫ অক্টোবর ভেনিজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে অনুষ্ঠিত হল গ্যাটোরেড কারাকাস রক (Gatorade Caracas Rock) ইভেন্টের ২৪তম আসর। তবে এবারের সকালটা ছিল বিশেষভাবে অনুপ্রেরণামূলক। হাজারো দৌড়বিদের মাঝে স্থির পদক্ষেপে, এক শান্ত হাসি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন একজন-তিনি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা জোসেলিন ব্রেয়া, যিনি একই সঙ্গে বয়ে নিয়ে চলছিলেন আরও একটি হৃদয়ের স্পন্দন। ঘরে বসে থাকা নয়, বরং তিনি বেছে নিলেন এক অনন্য অভিজ্ঞতা, যা আমাদের দেখায়, শারীরিক পরিবর্তন সত্ত্বেও সামনে এগিয়ে চলা এবং জীবনের নতুন ছন্দে পথ গড়ে তোলা সম্ভব।

নিজেকে অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে, বরং প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করার মানসিকতা নিয়ে জোসেলিন কারাকাসের বুক চিরে ১০ কিলোমিটারের দৌড় শেষ করেন ৪০ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে। দৌড় শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আবেগময় মুহূর্তে তিনি জানান:

“আমি এটি উপভোগ করতে গিয়েছিলাম, কারণ কারাকাস রক আমার প্রিয় দৌড়গুলোর একটি। আমার বোনও দৌড়াচ্ছিল, আর আমি চাইছিলাম এটিকে ধীরে, আরও সচেতনভাবে অনুভব করতে। ভাবিনি এটি এত বড় প্রভাব ফেলবে এবং সব বয়সের নারী, পুরুষ ও শিশুদের কাছ থেকে সাড়া পেয়েছি। এটি সত্যিই অত্যন্ত সুন্দর।”

গল্পের সমাপ্তিও ছিল হৃদয়স্পর্শী ও অনুপ্রেরণামূলক। তার বোন ইডিমার ব্রেয়া মহিলা বিভাগে ৩৪ মিনিট ৩ সেকেন্ডে বিজয়ী হন এবং ফিনিশ লাইনে দাঁড়িয়ে জোসেলিনের গলায় ফিনিশার মেডেল পরিয়ে দেন। এটি ছিল ভালোবাসা ও এক গভীর বিশ্বাসের নিদর্শন, যা আবারো প্রমাণ করে অসম্ভব বলে কিছু নেই।

চ্যাম্পিয়ন নারীর গল্প
জোসেলিন ব্রেয়া
জোসেলিন ব্রেয়া সাধারণ দৌড়বিদ নন। তিনি দুইবারের প্যান-আমেরিকান চ্যাম্পিয়ন, এবং ২০২৩ সালের সান সালভাদর সেন্ট্রাল আমেরিকান ও ক্যারিবিয়ান গেমসে (১৫০০ মিটার, ৫০০০ মিটার, এবং হাফ ম্যারাথন) তিনটি স্বর্ণপদক জয়ী। তিনি প্যারিস ২০২৪ অলিম্পিকের ফাইনালিস্টও ছিলেন। তার ক্রীড়াজীবন তাকে ভেনিজুয়েলা ও ক্যারিবিয়ান অ্যাথলেটিকসের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। তবে তার সবচেয়ে বড় অর্জন হল প্রতিযোগিতার তীব্র চাপের মধ্যেও নিজের প্রতি সত্য থাকা।

জোসেলিন তার মানসিক সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন: “অলিম্পিক গেমসের পর আমরা খুব তীব্র রুটিনে ছিলাম। গর্ভধারণের শুরুতে মানসিকভাবে মানিয়ে নেওয়া কঠিন ছিল; আমি দ্রুত যেতে চেয়েছিলাম, আগের মতোই প্রশিক্ষণ করতে চেয়েছিলাম, আর এটি আমাকে হতাশ করেছিল।”

এখানেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন তার প্রশিক্ষক এবং জীবনসঙ্গী, মারভিন ব্লাঙ্কো। জোসেলিন যোগ করেন, “মারভিন আমাকে বোঝাতে সাহায্য করেছে, আমাকে প্রক্রিয়াটি উপভোগ করতে, মানিয়ে নিতে এবং নিজের শরীরকে শোনার গুরুত্ব জানিয়েছে। মারভিন জানেন কী করতে হবে, আমাকে বোঝেন, মনে করিয়ে দেন এটি যাত্রার একটি অংশ। তার সমর্থন আমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” জোসেলিনের এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে, প্রতিটি সফল অ্যাথলেটের পেছনে থাকে ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং বোঝাপড়া।

প্রশিক্ষণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বর্তমানে জোসেলিন সান আন্তোনিও দে লস আল্টোস-এর ১৫০০ মিটার উচ্চতায় নিজের শারীরিক সামর্থ্য অনুযায়ী প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন। মন ও শরীরকে শক্তিশালী করে তিনি স্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার গল্প কেবল ক্রীড়া নিয়ে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি হাজারো নারীর প্রতিনিধি, যারা স্বপ্ন, শরীর এবং উদ্দেশ্যকে সমন্বয় করে চলেন। জোসেলিন প্রমাণ করছেন যে, অ্যাথলেট হওয়া মানে শুধু প্রতিযোগিতা নয়, বরং আবেগ, উদ্দেশ্য এবং ভালোবাসার সঙ্গে জীবন যাপন করা।

তিনি বলেন, “গর্ভাবস্থায় আমাকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় অন্য একজনের কথা ভাবতে শিখিয়েছে। এটি একটি বিশেষ অভ্যন্তরীণ সংলাপ-একটি সংযোগ যা আমাকে শক্তি দেয়। সতর্কতা ও সঠিক চিকিৎসা নির্দেশিকা মেনে চললে সব সময় সক্রিয় থাকা সম্ভব।”

গর্ভাবস্থাতেও জোসেলিন ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে থামেননি। তিনি সান্তো ডোমিঙ্গো ২০২৬ সেন্ট্রাল আমেরিকান ও ক্যারিবিয়ান গেমস-এ শীর্ষ প্রতিযোগিতায় ফিরে আসার পরিকল্পনা করছেন, যা লস অ্যাঞ্জেলেস ২০২৮ অলিম্পিক চক্রের দিকে নতুন যাত্রার সূচনা করবে। এছাড়াও, তিনি ইতিমধ্যেই আগামী ২ নভেম্বরের নাইকি রান কারাকাস ২০২৫-কে তাঁর পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন-যেখানে তিনি আবার প্রতিযোগিতা করবেন, উপভোগ করবেন এবং প্রমাণ করবেন যে, দৌড়ের আবেগ কখনও থামে না।

Published on: Monday, 20 October 2025, 10:22 pm | Last update: Monday, 20 October 2025, 11:37 pm | Total views: 56.

Leave A Comment